logo

সন্ত্রাসবাদে হিন্দু সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি: নতুন বাস্তবতায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোথায়?

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাম্প্রতিক মন্তব্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে দেশের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী নীতি ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে। গত সপ্তাহে একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সম্মেলনে ডোভাল বলেন, "সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মুসলমানদের চেয়ে হিন্দু সম্পৃক্ততার হার বেড়েছে। এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা-সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্মের একচেটিয়া সমস্যা নয়।"
এই মন্তব্যের পরই সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্বীকারোক্তি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত পদ্ধতির পরিবর্তন নয়, বরং দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বার্তার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
ধর্মীয় প্রোফাইলিংয়ের অবসান কি সম্ভব?
গত দুই দশকে দেশে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর অতিরিক্ত নজরদারির অভিযোগ ছিল সবসময়। ২০২৪ সালের এনসিআরবি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউএপিএ ধারায় গ্রেফতারকৃতদের ৪২% মুসলমান, অথচ জাতীয় জনসংখ্যার ১৪%। কিন্তু ডোভালের মন্তব্যে এখন সেই তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।
অথচ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (NIA) রিপোর্ট অনুযায়ী কিছু হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা বিস্ফোরক পাচার, টার্গেটেড কিলিং ও ধর্মীয় উসকানির সঙ্গে যুক্ত।

রাজনীতির রং কি পাল্টাচ্ছে?
নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় উসকানি এখনও প্রধান হাতিয়ার। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ৭২% প্রার্থীর ভাষণে হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের ইঙ্গিত ছিল, যা এআই-ভিত্তিক বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে (সূত্র: ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ডেমোক্রেসি)। কিন্তু ভোটার মনোভাব বদলাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশ উপনির্বাচনে দেখা গেছে, যেখানে বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি ছিল মূল ইস্যু, সেখানে ধর্মীয় রাজনীতি কাজ করেনি। মানুষ এখন আর 'পাকিস্তান', 'মুঘল' বা 'কাবা' নিয়ে কথা শুনতে চায় না তারা চাকরি ও চিকিৎসা চায়।"
পুলিশ-প্রশাসনে পরিবর্তনের স্বরূপ
ডোভালের মন্তব্যের পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এনআইএ ও স্টেট পুলিশগুলোকে নতুন নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, "সন্ত্রাসবাদের তদন্তে ধর্ম, বর্ণ বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য হবে না। প্রমাণভিত্তিক তদন্তই হবে একমাত্র মানদণ্ড।"
এছাড়া, ২০২৬ সাল থেকে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর ট্রেনিং মডিউলে 'ধর্মীয় প্রোফাইলিং বিরোধী' একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী আনিসুর রহমান সাহেব বলেন, "আমরা চাই না বিশেষ সুবিধা আমরা চাই সমান আচরণ।

সংবিধান বাঁচাও গণমঞ্চের সাংগঠনিক সভায় তিনি আরও বলেন- "Due Share Due Respect "

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বার্তা নয় - এটি একটি সামাজিক সন্ধির সূচনা হতে পারে। "যদি রাজনৈতিক দলগুলো এখনও ধর্মকে ভোটব্যাংক বানিয়ে রাখে, তাহলে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। কারণ ভোটার এখন আর অন্ধ নয় সে গুগলে সার্চ করে।
অজিত ডোভালের মন্তব্য হয়তো একটি ছোট বাক্য, কিন্তু তা দেশের রাজনীতি ও সমাজে বড় প্রভাব ফেলতে পারে-যদি সত্যিই প্রমাণভিত্তিক তদন্ত ও সমান নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়। নয়তো আবারও সেই পুরনো গল্প "ভোট এলেই ধর্মের ঢাক" আমাদের কানে বাজতে থাকবে।

95
5207 views